কীটপতঙ্গ কৃষির প্রধান আপদ এবং মানুষ ও প্রাণীর বহু রোগের বাহক। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে পোকা দমনের জন্য প্রধানত কীটনাশক ব্যবহার হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণ ছাড়াও ধারাবাহিকভাবে রাসয়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কীটপতঙ্গ রেসিস্ট্যান্ট হয়ে যায় এবং অবশিষ্টাংশ কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায় এবং একই সঙ্গে উপকারী কীট-পতঙ্গ ধংস হয়। এই বিভাগের বিজ্ঞানীরা পরিবেশবান্ধব পোকা দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করে যাচ্ছেন।
পোকা দমন প্রোগ্রামে বিশেষ করে অঞ্চলভিত্তিক আপদ দমন ব্যবস্থাপনায় নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি একটি প্রমাণিত দমন উপাদান। পরিবেশবান্ধব টেকসই আপদ ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনের জন্য এই বিভাগের বিজ্ঞনীরা ফলের মাছি ও মশার বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয়ের উপর ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সাব-ট্রপিক্যাল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে অনেক ট্রপিক্যাল ফলমুল ও শাকসব্জি জন্মায়। ফলশ্রুতিতে অনেক প্রজাতির ফলের মাছির উপস্থিতি এদেশে পরিলক্ষিত হয়। মেলন ফলের মাছি এবং ওরিয়েন্টাল ফলের মাছির উপস্থিতিই সবচেয়ে বেশী।বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির সাথে অন্যান্য পদ্ধতি যেমন জৈবিক, অণুজীবিয় ও জীবপ্রযুক্তিগত পদ্ধতি সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করে কিভাবে ফলের মাছি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার উপর আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ফলের মাছির প্রো-বায়োটিকস, প্যারাসিটয়েড, দেশব্যাপী প্রজাতির জরিপ এবং অল্পদামে দীর্ঘমেয়াদী ফলের মাছির টোপ তৈরী করা এই বিভাগের অন্যতম গবেষণা ক্ষেত্র।
(A) Locally made pheromone traps containing trapped fruit flies in Rajshahi, (B) McPhail traps supplied to farmers
বহুকাল আগে থেকে এদেশেমশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালারিয়া এবং ফাইলারিয়াসিস এর প্রাদুর্ভাব আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডেঙ্গু নামক মশাবাহিত ভাইরাসঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায়শ:ই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এজন্যই মশা নিয়ন্ত্রণের পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি উদ্ভাবন করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। Bacillus thuringiensis israelensis এবং স্থানীয় স্ট্রেইনের Baciluus sphaericus প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া হতে এডিস ও কিউলেক্স মশার লার্ভা নিধনকারী জৈব বালাইনাশক উদ্ভাবনের জন্য এই বিভাগের বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও, মশার এসআইটি সংক্রান্ত গবেষণার অনেক বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আইএইএ-সিআরপি প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় একটি মশক প্রতিপালন গবেষণাগার এবং মশক প্রতিপালন সংক্রান্ত কিছু বেসিক গবেষণা সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা এসআইটি প্রয়োগের জন্য বিকিরিত মশার ফিটনেস পরীক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
ফলমুল ও শাকসব্জি বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল। রেসিডিউয়াল বিষক্ততার কারণে ধূমায়িত রাসয়নিক বিষ দ্বারা সংগনিরোধ পদ্ধতি সম্পন্ন করা আশাব্যঞ্জক নয়। কোল্ড ও হিট ট্রিটমেন্ট পদ্ধতিতে অনেক সময় লাগে এবং সতেজ ফলমুল ও শাকসব্জির গুনগতমানের কিছুটা ক্ষতি করে থাকে একইসাথে এই পদ্ধতিগুলো কোন কোন পণ্যের জন্য উপযোগী নয়। পক্ষান্তরে বিকিরণ পদ্ধতিতে অনেক ধরণের সতেজ ফলমুল ও শাকসব্জির পোকা বিমুক্ত করা যায়। প্রধান সংগনিরোধ পদ্ধতি হিসেবে বিকিরণ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং ভবিষ্যতে অনেক দেশেকৃষিজাত পণ্যের ট্রিটমেন্টে ব্যবহৃত হবে। এই বিভাগ নিয়োজিত আছে ১. রপ্তানিযোগ্য কৃষিজাত পণ্যের প্রধান রেগুলেটরী কীটপতঙ্গ সনাক্তকরণ ২. প্রধান রেগুলেটরী কীটপতঙ্গের সঠিক সংগনিরোধ ডোজ নির্ধারণ ৩. বাণিজ্যিক প্রয়োগের জন্য বিকিরণ ডোজের বহুমাত্রিক পর্যায়ে ভ্যালিডেশন টেস্ট করা হচ্ছে।
প্রাথমিক ভ্রুণ দশায় স্বল্পমাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে অত্র বিভাগের বিজ্ঞানীরা রেশম সুতার উৎপাদন ৩৫% বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। বিকিরিত রেশমপোকা হতে উৎপাদিত রেশম সুতার মান অবিকিরিত রেশমপোকা হতে উৎপাদিত রেশম সুতার তুলনায় অনেক ভাল। বিকিরিত রেশমপোকা হতে অধিক সুতা উৎপাদিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য মলিকুলার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা দেয়ার জন্য বিভাগের বিজ্ঞানীগণ গবেষণা তত্ত্বাবধানসহ আনুষাঙ্গিক গবেষণা সাহায্য করে থাকেন।
এই বিভাগ হতে কোন বানিজ্যক সেবা প্রদান করা হয় না।
গ্রোথ ছেম্বার, কুল্ড ইনকিউবেটর, অল্টাফ্রিজার, আইস ফ্লেকার, পিসিআর, রেফ্রিজারেটেট সেন্ত্রিফিউজ্জ, ফ্রুট টেক্সার এনালাইজার, ক্রমামিটার, জেল ডক সিস্টেম, ইনভারটেড মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি।