বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস
জিপিও বক্স নং-৫, ফরিদপুর-৭৮০০ ।
ফোন: ০৬৩১-৬৩৬৮০, ই-মেইল : cnmufaridpur@gmail.com
আমাদের সম্পর্কে
পরমাণু চিকিৎসা ব্যবস্থা পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বিগত ১৯৬১ সন থেকে এদেশে এই চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। চিকিৎসক এবং রোগীদের বর্ধিত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরমাণু চিকিৎসা ইনষ্টিটিউট এর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর পরমাণু চিকিৎসা ইনষ্টিটিউট মিটফোর্ড, কুমিল্লা এবং বগুড়া পরমাণু চিকিৎসা ইনষ্টিটিউট এর সাথে একই প্রকল্পের অধীনে যাত্রা শুরু করে। এই ইনষ্টিটিউটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থিত। ১৯৯৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী মহোদয় এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন এবং ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহের জনসাধারণ প্রয়োজন অনুযায়ী এই পরমাণু চিকিৎসা ইনষ্টিটিউট হতে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা স্বল্পমূল্যে পেয়ে থাকে। বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে ইনষ্টিটিউট এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বৈজ্ঞানিক বিভাগ সমূহ:
১। নিউক্লিয়ার স্ক্যানিং
২। আল্ট্রাসনোগ্রাম (কালার ডপ্লার)
৩। থাইরয়েড আপটেক
৪। বোন ডেনসিটোমেট্রি
৫। ইন-ভিট্রো ল্যাবরেটরী
৬। নিউক্লিয়ার মেডিসিন থেরাপি
এই কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা , চিকিৎসক এবং পদার্থবিদ পরমাণু চিকিৎসা এবং আল্ট্রসনোগ্রাফির বিভিন্ন গবেষনার ক্ষেত্রে যুক্ত আছেন। ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত অনেক কাজ জাতীয় বিজ্ঞান ভিত্তিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু কাজ বৈজ্ঞানিক আলোচনাসভায় উপস্থাপিত হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা জাতীয় দৈনিক পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে।
প্রদত্ত সেবা
নিউক্লিয়ারস্ক্যানিং :
এই বিভাগে একটি আধুনিক গামা ক্যামেরা আছে, যার মধ্যে টোমোগ্রাফিক সুবিধা আছে। গামা ক্যারেমা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক , হাড় , যকৃৎ , কিডনি ইত্যাদি স্ক্যানের কাজে ব্যবহৃত হয়। এইপদ্ধতিতে র্নিদিষ্ট অঙ্গের জন্য নির্ধারিত কিট (Radio Pharmaceutical) পরিমানমত রেডিও আইসোটপের সাথে মিশিয়ে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানোর পরে গামা ক্যামেরার মাধ্যমে ঐঅঙ্গেরছবি নেয়া হয়। স্পেক্ট (SPECT) ক্যামেরাটি শরীরের যেকোন অঙ্গের গভীরে অবস্থিত টিউমারের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম।
বোনস্ক্যানঃ
অস্থি তন্ত্রের কোন রোগ যেমন টিউমার, অন্য কোন অংগ থেকে বিস্তারলাভকারী ক্যান্সার, প্রদাহ ইত্যাদি সনাক্তকরণের জন্য বোন স্ক্যান করা হয়।
কিডনী স্ক্যানঃ
কিডনীর অবস্থান, আকার-আকৃতি, জন্মগত ত্রুটি, কিডনীর টিউমার, প্রদাহ, কিডনীর কোন অংশের কোষকলার কার্যকারিতা ইত্যাদি জানার জন্য কিডনী স্ক্যান করা হয়। কিডনীর রক্তনালীর সংকোচনের (Renal Artery Stenosis) জন্য উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে কিনা জানার জন্য ক্যপট্রোপিল রেনোগ্রাম করা হয় ।
লিভার-সপ্লীন স্ক্যানঃ
লিভার বা যকৃতের অবস্থান, আকার-আকৃতি এবং স্থানীয় বিকৃতি বা রোগ যেমন- টিউমার,ক্যান্সার, ফোঁড়া এবং কোষকলার কার্যকারিতা , স্পীন বা প্লিহার অবস্থান , আকার-আকৃতি এবং স্থানীয় বিকৃতি বা রোগ যেমন- টিউমার, ফোঁড়া ইত্যাদি অথবা লিভার ও স্পীনের অন্য কোন অস্বাভাবিকতা জানার জন্য এই পরীক্ষা করা হয় ।
ব্রেন স্ক্যানঃ
মস্তিস্কের রোগ যেমন টিউমার, ফোঁড়া অন্য কোন অঙ্গ থেকে বিস্তারলাভকারী ক্যান্সার , মস্তিস্কে রক্তসঞ্চালনে অস্বাভমাবিকতা, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি সনাক্তকরণের জন্য আইসোটোপ ব্রেন স্ক্যান করা হয়
থাইরয়েড স্ক্যানঃ
এতে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার-আকৃতি, জন্মগত ত্রুটি যেমন- একপাশের অনুপস্থিতি, অস্বাভাবিক উপস্থিতি ইত্যাদি এবং থাইরয়েড গ্রন্থির গোটা বা নুডুলের ধরণ (শীতল না উঞ্চ) শল্য চিকিৎসার পরবর্তী অবস্থা বা ক্যান্সারের উপস্থিতি ইত্যাদি জানা যায় ।
সমস্ত শরীর স্ক্যানঃ
শরীরের অন্য কোন অংশে থাইরয়েড ক্যান্সার বিস্তার লাভ করেছে কিনা তা সনাক্তকরণের জন্য রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল দিয়ে সমস্ত শরীর স্ক্যান করা হয় ।
রেনোগ্রামঃ
এই পরীক্ষাতে গামা ক্যামেরা ব্যবহৃত হয় । এই পরীক্ষার বিশেষত্ত যে এর দ্বারা একই সঙ্গে কিডনির আকার- আকৃতি এবং কার্যকারিতা নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষায় কিডনির কার্যকারিতার শতকরা হার নির্ণয় করা যায়। রোগীদের ফলোআপের প্রয়োজনে এই পরীক্ষা বারবার করা যায় । নিস্ক্রমণতন্ত্রের অবরোধ থাকলে তা True না False জানার জন্য ডাই ইউ রেটিক রেনোগ্রাম করা হয়।
থাইরয়েড গ্লান্ডের রেডিওআয়ডিন আপটেকঃ
এই পরীক্ষায় রোগীর দেহে রেডিওআয়োডিন প্রবেশ করানোর নির্দিষ্ট সময় পরে তার থাইরয়েড গ্লান্ডে ঘনীভুত রেডিওআয়োডিনের শতকরা হার নির্ণয় করা হয়। এই আপটেকের শতকরা হার থাইরয়েডের নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয়ে কার্যকর বিশেষত আয়োডিনের অভাবজনিত অসুখের ক্ষেত্রে। থাইরোটক্সিকের ক্ষেত্রে কি পরিমান আয়োডিন দিতে হবে তা নির্ণয়ে এবং থাইরয়েড ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কত সময় ব্যাপি আয়োডিন থেরাপি দিতে হবে তা নির্ধারণেও এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আল্ট্রাসনোগ্রাফিঃ
এই শাখাতে রোগীর সংখ্যা বেশী। এই ইনষ্টিটিউট এ তিনটি আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র আছে যার মধ্যে দুইটিতে কালার ডপলার সুবিধা এবং একটিতে (3D) ultrasound এই সুবিধা আছে। নিকটবর্তী হাসপাতালের অধিকাংশ রোগী প্রয়োজন অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য এই ইনষ্টিটিউটে আসে। ব্যাক্তিগত উপচর্যাকারী চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র নিয়েও অনেক রোগী এই সুবিধা নিয়ে থাকে। আল্ট্রাসনোগ্রাম দিনে দিনে একটি নিত্যনৈমিত্তিক পরীক্ষায় পরিণত হচ্ছে। এই পরীক্ষা খুব সহজে এবং ঝুঁকিমুক্তভাবে শরীরের অভ্যান্তরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমনঃ যকৃৎ , পিত্ত , কিডনী এবং উদরিক অঙ্গ সমূহের নিরীক্ষা করে থাকে। গর্ভবতী মা দের ভ্রুণের অবস্থা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা ধীরে ধীরে রোগীদের এবং চিকিৎসকদের কাছে অপরিহার্য ও জনপ্রিয় হয়েছে।
ইন-ভিট্র পরীক্ষাঃ
রেডিওইমিউনোএ্যাসে পদ্ধতিতে রক্তে থাইরয়েড হরমোনসহ অন্যান্য হরমোনের পরিমান নির্ণয় করা যায়। এতে কোন তেজস্ক্রীয় পদার্থ মানবদেহে প্রবিষ্ঠের দরকার হয় না। রেডিও ইমিউনোএ্যাসে এনজাইম এ্যাসে থেকে অধিকতর সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য। কারণ এই পদ্ধতিতে মান নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ব্যাচ এ্যানালাইসিস করা হয় । এই পরীক্ষার মাধ্যমে হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডিজম রোগ নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসাধীন এসকল রোগীর ফলোআপ করা হয় ।
নিউক্লিয়ার মেডিসিন থেরাপি
রেডিওআয়োডিন থেরাপিঃ
বর্তমানে থাইরোটক্সিকাস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেডিওআয়োডিনের ডোজ দেয়া হয়। এইসকল অধিকাংশ রোগীদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি নিরাপদ এবং এক্ষেত্রে রোগটির পূণরাবৃত্তির সম্ভাবনা খুবই কম। এই কেন্দ্রে থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিৎসা এখনও শুরু হয়নি, কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত আগত রোগীদের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এবং আল্ট্রাসাউন্ড, ঢাকা তে পাঠানো হয়।
বিটা রেডিয়েশনঃ
চোখের টেরিজিয়াম রোগের অপারেশনের পর এর মুলোৎপাটন করা বা রোগের পুণরাক্রমন রোধের জন্য স্ট্রনসিয়াম ৯০ বিটা এ্যাপ্লিকেটর দিয়ে বিটা রেডিয়েশন দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। কর্নিয়াল ভাস্কুলারাইজেশনের ক্ষেত্রেও এই চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।
পারমাণবিক নিরাপত্তা এবং বিকিরণ নিয়ন্ত্রণঃ
পারমাণবিক নিরাপত্তা এড়্গং বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ আইনের নিয়মানুসারে পারমাণবিক নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রতি কার্যদিবসের শুরুতে এবং শেষে সার্ভে মিটারের সাহায্যে পরিদর্শনীয় এবং নিয়ন্ত্রিত এলাকা সমুহের বিকিরণের মাত্রা মাপা হয় এবং সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রত্যেক রেডিয়েশনকর্মী ব্যক্তিগত গৃহীত রেডিয়েশনমাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য TLD ব্যবহার করা হয়। রেডিওআইসোটোপ রোগীর শরীরের প্রবেশের পরে এবং রেডিয়েশন থেরাপীর ক্ষেত্রে রোগীদের পৃথক কক্ষে রাখা হয়। অফিসের প্রবেশ পথে এবং ভবনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড এবং রেডিয়েশন চিহ্নযুক্ত বোর্ড টানানো আছে । বিকিরণবর্জ্যসমূহ নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়।
যোগাযোগ/জনবল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস
জিপিও বক্স নং-৫, ফরিদপুর-৭৮০০ ।
ফোন: ০৬৩১-৬৩৬৮০, ই-মেইল : cnmufaridpur@gmail.com